আবারো স্কুলের গুলি
৪ ডিসেম্বর ২০১৫বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ব্যার্নার্ডিনো কাউন্টির সরকারি কর্মচারীদের একটি হলিডে পার্টিতে ঢুকে যে আততায়ীরা ১৪ জন মানুষকে গুলি করে মারে – এবং পরে পুলিশের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে নিজেরাও নিহত হয় – তারা ছিল ২৮ বছর বয়সি সঈদ রিজওয়ান ফারুক ও তার স্ত্রী অথবা বাগদত্তা, ২৭ বছর বয়সি তশফিন মালিক৷
ফারুকের জন্ম ইলিনয় রাজ্যে; পাকিস্তানি অভিবাসীদের সন্তান৷ মালিক-এর জন্ম পাকিস্তানে; ফারুক-এর সঙ্গে দেখা হওয়া অবধি তার বাস ছিল সৌদি আরবে৷ দম্পতির বাড়ি থেকে বহু পাইপ-বোমা আর হাজার হাজার রাউন্ড গুলি খুঁজে পেয়েছে পুলিশ৷ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বা উদ্দেশ্য কি হয়ে থাকতে পারে, সে বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে এফবিআই৷
মার্কিন মুলুক জুড়ে মুসলিম অ্যামেরিকানরা স্যান ব্যার্নার্ডিনো হত্যাকাণ্ডে বিমূঢ়তা ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন৷ গুলিচালনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাউন্সিল অন অ্যামেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স লস এঞ্জেলেস এলাকার মুসলিম নেতৃবর্গ ও তশফিন মালিক-এর ভাইকে নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে৷
সেই সম্মেলনে পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিচালক হুসাম আইলুশ বলেন, ‘‘মুসলিম সম্প্রদায় তাদের মার্কিনি বন্ধুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই বিকৃত মনোবৃত্তিকে প্রত্যাখ্যান করছে, যা এই ধরনের জঘন্য সহিংস কার্যকলাপকে বৈধ বলে ঘোষণা করার চেষ্টা করে৷'' কিন্তু ক্ষতি যা হবার, ততক্ষণে তা হয়ে গেছে৷
‘আমি প্রথম যে প্রশ্ন করেছিলাম, সেটা ছিল, লোকটার নাম কি মহম্মদ?' লস এঞ্জেলেসের হালের এক রাজনীতিক নাকি বলেছেন৷ অপরদিকে ডেট্রয়েটের কাছে বাস এমন এক মুসলিম, আদম হাশেম রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘‘গুলি যখন চলেছে, তখন আমি জিম-এ গিয়েছিলাম৷ সব টিভি-তে তার ফুটেজ দেখাচ্ছে আর আমি শুধু ভাবছি, ‘ঈশ্বর করুন, যেন ওরা (আততায়ীরা) প্রাচ্য বংশোদ্ভূত না হয়, শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, মুসলিমদের সঙ্গে যুক্ত কোনো কিছু না হয়'৷'' প্রতিক্রিয়ার ভীতি এমনই৷
কিছু মার্কিন মুসলিমের মতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আক্রোশ আর গোঁড়ামির একটা শিরা খুলে দিয়েছে, বিশেষ করে মুসলিমরা যার শিকার হচ্ছেন৷ যেমন রিপাবলিকান প্রার্থী টেড ক্রুজ বৃহস্পতিবার ইহুদি রিপাবিকান সমর্থকদের একটি সমাবেশে বলেছেন যে, স্যান ব্যার্নার্ডিনোর হত্যাকাণ্ড অ্যামেরিকায় ‘‘ইসলামি সন্ত্রাসের'' আরো একটি নিদর্শন হতে পারে, বলে তাঁর আশঙ্কা৷
কিন্তু সন্ত্রাস ছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধনের প্রশ্ন৷ সেক্ষেত্রে জেসন কার্শ টুইট করেছেন, ‘‘বুধবার: আমরা শুধু নিহতদের কথা স্মরণ আর তাদের জন্য প্রার্থনা করব না...৷ বহস্পতিবার: না, না, ঠাট্টা করছিলাম৷ এবার দেখো, আমরা আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধনের কি দশা করি!'' টুইট-টা অবশ্যই রিপাবলিকানদের ঠাট্টা করে৷
সমস্যাটা আরো স্পষ্ট করে বলেছেন জেড হ্যানসন, তাঁর টুইটে: ‘‘যুক্তরাষ্ট্রে এ বছর বিভিন্ন স্কুলে ৬২টি গুলিচালনার ঘটনা ঘটেছে৷ আগ্নেয়াস্ত্র যে সহিংসতা নিয়ে আমাদের সমস্যার একটা অঙ্গ, তা-তে কোনো সন্দেহ নেই৷''
‘দ্য জ্যানিটর' সকলকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন তাঁর টুইটে: ‘‘ক্রিসমাসের আগে আর তো কয়েকটা মাত্র গুলিগোলার ঘটনা!''
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)